অযথার হালখাতা !

Become A Blogger. Publish Your Post Click Here!

X




Bottom Article Ad

অযথার হালখাতা !

অযথার হালখাতা ! 


আমার কোনো টেলেন্ট নেই। আমি প্রতিভাহীন। মানুষের মধ্যে থেকে প্রকাশিত এই ভাবটি বোধহয় সব থেকে নিচুস্তরের ভাব।  সারাদিন আয়নার সামনে বসে থাকা অথবা সেলুনে গিয়ে একটি হেয়ারকাট দেওয়া ছেলে মেয়েরা যখন এই ধরনের ব্যাক্য নিক্ষেপ করে। তখন মনে হয় এই পৃথিবীতে হাজার বছর ধরে যেই মানব গোষ্ঠী সংগ্রাম করছে, জ্ঞান সাধনা করছে – সেই দুর্বার সভ্যতার মনোভাবকে দুষিত করছে তারা। 


অযথার হালখাতা একরাম আহমেদ শিশির
Photo by Arifur Rahman form Pixels

রাত দধরে যেই ছেলেমেয়েরা নিজেকে নানাভাবে অন্যর থেকে স্মার্ট, উচ্চ বিলাসি অথবা নিজেকে খুব বড় আর সুন্দর করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। সেই গোষ্ঠীর এইটুকু বোঝা দরকার এই কথাটি অবশ্যই তাকে অনেকখানি নিচে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

এই যে প্রতিভাহীন মনোভাব। এর পিছনে অনেকখানি প্রভাব ফেলেছে সোস্যাল মিডিয়াগুলো। এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে এই সোস্যাল সমাজের প্রজন্ম যে, যদি কেউ কোভিডের ভ্যাক্সিনও আবিষ্কার করে। সেটা কেবল সোস্যাল মিডিয়ায় দেখানোর জন্য করবে। আর এই জন্যই এই প্রতিভাহীনতা। এমনটা না যে আমাদের দেশে নতুন নতুন সূর্য উদয় হচ্ছে না। তবে তার অংশ অতি ক্ষুদ্র। আর যারা নিজেদের প্রতিভাবান বলে দাবি করছে বা সমাজ যাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে তাদের যে প্রতিভার মূল্য কতটুকু তা দাড়ি পাল্লা দিয়ে মাপা সম্ভব। এই প্রযুক্তির যুগে আমরা প্রযুক্তির সৎ ব্যাবহারটা করতে ব্যার্থ ।আর একদিন এই ব্যর্থতার ফলস্বরূপ আমাদের সকল উদ্যোগ, সকল চাওয়া পাওয়া  বিলিন হয়ে যাবে ভার্চুয়াল জগতের অতল গভীরে। আবার এই প্রযুক্তি আমাদের দারুন ভাবে অলসও করেছে বটে। আমরা এখন এক পা হাটতে পর্যন্ত রাজি নই। প্রয়োজনে আমরা অর্থ প্রদান করব তবুও নিজে থেকে কিছু করব না। বাঙালি সেই এনালগ আমলে যেমন উচ্চাবিলাশী ছিল তেমনি এই ডিজিটাল আমলেও রয়েছে। বিলাশীতা আমাদের পূর্বসূরিদের থেকে আমাদের রক্তে ধমনীতে প্রবেশ করেছে। তবে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, আমাদের ধমনীতে কেবল বিলাশীতা-ই প্রবেশ করেছে। আমাদের সংগ্রামী বিপ্লবী মনোভাব, অত্যাচারের বিরুদ্ধে মিছিল কিংবা অধিকার আদায় এসব বোধহয় আমাদের শহিদের সাথেই এই বাংলা থেকে চলে গিয়েছে। নয়ত এখন, যখন আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি, সেই রাষ্ট্রের অধিকার, স্বাধীনতার মূল্যবোধ আমরা কতটুকু রক্ষা করছি বা করতে পেরেছি তা কালে কালেই জাতীয় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। আমাদের পূর্বসূরি পরিশ্রমী সংগ্রামি চাষা-ভূষাদের কাছ থেকেই বা আমরা কতটা শক্তি পেয়েছি তা এই জাতির অলসতা দেখলে খানিকটা আচ করা যায়। তবে হ্যা আমরা শিক্ষিত হয়েছি৷ বিদেশ থেকে প্রতিদিন অহরহ ডিগ্রি জ্ঞান আমরা মাথায় করে নিয়ে আসছি৷ এসে কি করছি? এই ডিগ্রি জ্ঞান আমরা কোথায় রাখছি? বিশ্ববিদ্যালয়ের লকারে? আমি সত্যি অবাক হই যখন দেখি ছোট একটি ছেলে কেবল কবিতার শব্দ অর্থই মুখস্থ করছে। এমনকি কবিতার সারমর্মও মুখস্থ ঠটোস্থ করছে স্যারের ভয়ে, পরীক্ষার ভয়ে, পাশের ভয়ে৷ অথচ এই কবিতাগুলোর সারমর্ম কতটুকু এই দেশের পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের মধ্যে রয়েছে তা এই প্রজম্মের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়।এই কবিতা, এই নজরুল, এই কাব্যিকতা আজকাল কি লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে অথবা মানুষের আচার-আচারণ, কথা-বার্তা এসবেও প্রতিফলিত হয় ?  বীরবলের প্রবন্ধের কথাই বলি। প্রাবন্ধিক কত সুন্দর করেই না আমাদের বুঝিয়ে ছিলেন সাহিত্য কি। সাহিত্যে মর্ম কতটুকু। তো সাহিত্যের এই প্রদীপকে আমি ইউটিউবে খুজতে লাগলাম। প্রমথ চৌধুরীকে নিয়ে কেউ কোনো ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন কিনা দেখার জন্য। কিন্তু খুবই হতাশ হলাম। উনাকে নিয়ে অনেক গুলো ভিডিও আছে তবে সেগুলো প্রধানত উনাকে নিয়ে না, সেগুলো আমাদের শিক্ষিত সমাজের  ভার্সিটি, প্রিলি, চাকরী এসব পরিক্ষায় আসা প্রশ্নের বিশ্লেষণ মূলক কথাবার্তার ভিডিওচিত্র। বাংলা সাহিত্যের এই নক্ষত্র, নিবেদিত প্রান বললেও ভুল হবে না, আমরা কেউ কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছি না।আমরা সাহিত্য বা সাহিত্যর সিংহদের মূল্য দিচ্ছি কেবল মাত্র তাদের জীবন নিয়ে এক ধরনের কুইজ প্রতিযোগিতা খেলা দিয়ে। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিযোগিতায় জেতার, প্রশ্ন মূখস্ত করার। তারপর পাস করে গেলে শেষ। যাই হোক সাহিত্য নিয়ে ভাবার জন্য দেশে অনেক পন্ডিত মহাশয়েরা রয়েছেন। 


প্রতিভা হচ্ছে মানুষের ইচ্ছাশক্তি আর চর্চার বিষয়। যে কেউ যেকোনো কিছু আয়ত্ত করতে পারে। নতুন কিছু তৈরিতে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখে করতে চাওয়ার ইচ্ছা। এই ইচ্ছা যত প্রবল হবে মানুষ তত বেশি পরিশ্রম করার শক্তি পাবে। আমি একটি সূত্র বের করার চেষ্টা করেছি— প্রতিভার সূত্র। প্রতিভা= ইচ্ছাশক্তি + সাধনা। এখন ইচ্ছা শক্তির মধ্যে আবার নানা স্তর রয়েছে। প্রথমত কিছু করার ইচ্ছা থাকা,উদ্দেশ্য, জ্ঞান আহরণ, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রারম্ভিক স্তর এগুলো মিলেই তৈরি হয় ইচ্ছাশক্তি শব্দটি। অন্যদিকে সাধনাতে রয়েছে পরিশ্রম,চর্চা,উদ্যম, বিজয়ী মনোভাব ইত্যাদি। এসব উপাদান সম্বনয় করলেই মিলবে প্রতিভা। অনেকেই আমার সাথে তর্কে জড়াবেন। এইসব থাকলেই কেবল হয় না। প্রতিভা গড গিফটেড। হ্যা আমি হয়ত কিছু জায়গায় হ্যা মিলাব। তবে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবও যারাই বর্তমানে প্রতিভাবান হয়ে সফলতার উচ্চ আসন ধারণ করেছেন, তারা সবাই কোনো না কোনো ভাবে, হয়ত জেনে নয়ত অজান্তে এই সূত্রটিতে হাত রেখেছেন। ধরুন ২জন  অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলো।এখন সংষ্কৃতি অনু্যায়ী আমাদের অভিনেতা হতে হলে প্রয়োজন সুন্দর চেহারার। আমরা যেই দুইজন ব্যাক্তিকে উদাহরণে উপস্থাপন করেছি তাদের একজন লোক চক্ষুতে খুব সুন্দর, অন্যজন না। এখন যেই জন সুন্দর সে তার সৌন্দর্য নিয়েই চলে গিয়েছে অভিনেতা হতে অন্যদিকে লোকচক্ষুতে অসুন্দর লোকটি নিজের মধ্যে সুত্রটি প্রয়োগ করেছেন। তারপর নাহয় গিয়েছেন। এখানে আমরা অবশ্যই দেখব যিনি অডিশনে ভালো পার্ফোম্যান্স দিয়েছেন তিনিই বিজয়ী হয়েছেন। আর যিনি-ই ভালোভাবে সুত্রের সকল উপাদান আয়ত্ত করেছেন তিনিই বিজয়ী। বিশ্বাস না হলে আপনি হাজারো সুদর্শন আর অভিনেতাদের মধ্যে সুত্রটি প্রয়োগ করে প্রমান দেখতে পারেন। একজন চিত্রশিল্পী যখন একটি চিত্রকলা তৈরি করতে বসেন তিনি সুত্রটি নিজের মধ্যে গেথে নিয়েই বসেন। আমরা সবাই সফল হতে রাজি, সবাই স্বপ্ন দেখি, সবাই বড় হতে চাই, কিন্তু কেউ বলি না আমি পারব, আমি করছি। একভাবে বলতে গেলে স্বপ্ন আমাদের অনেককে অলস বানিয়েছে। এই শিক্ষিত সভ্য সমাজ, এই সংগ্রামি বাঙালী, ন্যায়ের ঝান্ডাধারী মানুষেররা আজ নানা ভাবে নিজেদের মূল্য হারাচ্ছে। সমাজে যেই  অধুনিক জাল বিস্তার লাভ করছে সেই জালে আমরা ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছি নোংরা ভাবে। সমাজে যেসব নতুন বিধির প্রচলোন ঘটছে তা ক্রমশ আমাদের গ্রাস করেছে। ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে আমাদের মূল্যবোধ। অন্ধকার থেকে অন্ধকারে যাচ্ছি আমরা। আমাদের সঠিক মানসিক বিস্তার হচ্ছে না। এই শিক্ষা, এই সমাজ, এই জাতি দিন দিন শুধুমাত্র অর্থের আহবানে সাড়া দিচ্ছে।আমরা কোমড় বেধে প্রতিযোগিতায় নেমেছি। সবাই শুধু দৌড়াচ্ছি সফলতার পিছনে। সেই মহান ব্যাক্তিটি কি চায় আমরা জানি না। উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর যে আমরা কি করব সেটাও জানি না। তবে সবাই যে আফসোস করব সেই বিষয়ে নিশ্চিত৷   অতীতে আমাদের পূর্বসূরিরা যেই অন্ধকার শিকল থেকে বাচিয়েছিলেন আমরা আবার ক্রমেই যাচ্ছি সেদিকে। এর ভুক্তভোগী কেবল মাত্র আমরা হব না। হবে আমাদের পরবর্তী প্রজম্ম। তাই আমাদের উচিৎ সঠিক সময়ে সঠিক জ্ঞান চর্চার। প্রতিযোগিতা মূলক জ্ঞান অন্ধের জ্ঞান। আমরা চাইলে সব করতে পারব। সৎ ইচ্ছার প্রয়োজন একটু৷ এই ইচ্ছাটুকু দিন দিন মলিন যেন না নয় সে জন্যও দরকার অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আসা। আমরা সবাই যেন প্রতিদিন বলতে পারি আমরা বাঙালী। আমাদের ভাষা যেমন আমাদের অহংকার। তেমনি আমাদের দেশের প্রতিটি বাংলা ভাষার মানুষ, হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান, প্রতিটি বাঙালি একেকজন আমাদের কাছে অহংকার হবে। প্রতিটি শিশু প্রতিটি তরুন হবে আমাদের ভবিষ্যতের অহংকার। আর এর জন্য যেটা দরকার তা হলো আমাদের বাঙালীর প্রতিভা এবং জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করা।নিজেকে সত্যিকার স্বপ্ন দিয়ে সাজানো। ডিজিটাল যুগে কম্পিউটারের ২টি ডিজিটের মধ্যে আমাদের আবেগ, যাত্রা, স্বপ্ন, সংস্কৃতি বিলিন না হয় সেই কামনা করি। 



2 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন